ভূমিকা
নারীবাদ বা ফেমিনিজম সম্পর্কে তো সবাই মোটামুটি জানেন। আদিনারীবাদ বা প্রোটোফেমিনিজম সম্পর্কে কখনও শুনেছেন? ঠিক ধরেছেন, নারীবাদের ধারণার পূর্বে নারীর অধিকার বিষয়ক যেসব প্রতিবাদ, এক্টিভিজম, রচনা, বিপ্লব, সমাজ সংস্কার ও চিন্তাধারার অস্তিত্ব ছিল তাই আধিনারীবাদের ক্যাটাগরিতে পড়ে। আদিনারীবাদের যুগটাই এমন ছিল যেখানে “নারীবাদ” শব্দটিই প্রচলিত হয়নি, সকলের কাছে শব্দটি অজানাই ছিল[১] এভাবে হিসাব করলে বিংশ শতকের পূর্বের নারীবাদকেই আদিনারীবাদ বলা যায়।[২][৩] কিন্তু অনেকেই বলেন যে আধুনিক নারীবাদ বলতে যা বোঝানো হয় তার অনেক কিছুই অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের নারীবাদেও ছিল। কাজেই অন্যান্য যুগবিভাগ নিয়ে যেমন পণ্ডিতদের মধ্যে অনেক বিতর্ক দেখা যায়, আদিনারীবাদ ও নারীবাদের মধে বিভেদ ঠিক কোথায়, মানে ঠিক কখন আদিনারীবাদ শেষ হয়ে নারীবাদের যাত্রা শুরু হয়েছে সেই বিষয়ে ভালই বিতর্ক রয়েছে।
অনেকেই ১৮শ ও ১৯শ শতকের নারীবাদকে আদিনারীবাদে ফেলতে চান না। আমিও এই লেখাটিতে তাদেরই পক্ষ নিয়ে ১৮শ ও ১৯শ শতকের নারীবাদকে আদিনারীবাদের আলোচনা থেকে বাদ দিয়েছি। আদিনারীবাদের আলোচনায় তাই প্রাচীন গ্রিসের সময়কাল থেকে ১৭শ শতকের নারীবাদই থাকবে। যাই হোক, আদিনারীবাদ নিয়ে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে রাখি। কোন কোন আধুনিক পণ্ডিত “আদিনারীবাদ” শব্দটির ব্যাবহারযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন করেন,[৪] ঠিক যেমন উত্তরনারীবাদ বা পোস্টফেমিনিজম এর ব্যাবহারযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। যাই হোক, এত এত বিতর্ক থাকার পরেও আমি স্বীকার করি যে আধিনারীবাদ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। নারীবাদের ইতিহাস জানতে, নারীবাদ সম্পর্কে জানতে, বা এক কথায় পুরুষাধিপত্যের বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম সম্পর্কে জানতে আদিনারীবাদ সম্পর্কিত আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ের নারীবাদ সম্পর্কে জানতে আমাদের ২০শ শতকের নারীবাদের পটভূমি জানতে হয়, সেটা সম্পর্কে জানতে গেলে জানতে হয় ১৯শ শতকের পতভূমি, একইভাবে ১৮শ শতকে যে নারীবাদের প্রথম বিকাশ হয় মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট সহ অন্যান্যদের হাত ধরে তার পটভূমি বুঝতেও ১৭শ শতক ও তার পূর্বের সময়ের নারীবাদী চিন্তা, তথা আদিনারীবাদী চিন্তাধারা সম্পর্কে জানার প্রয়োজন আছে। নারী অধিকার সংক্রান্ত চিন্তাধারার একটি ক্রমবিবর্তনমূলক ও ক্রমবিকাশমান ঐতিহ্য আছে, যাকে বাদ দিয়ে নারীবাদের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাই আদিনারীবাদের আলোচনা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আদিনারীবাদের এই আলোচনায় ইতিহাসের সকল অংশে নারীর অধিকারের আন্দোলন ও সংস্কারকে এই আলোচনায় তুলে ধরা সম্ভব হবে না, তবে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমে আদিনারীবাদ
প্রাচীন গ্রিসে প্লেটোর আদিনারীবাদ
অন্য অনেক দার্শনিক আন্দোলন ও চিন্তাধারার মত নারীবাদের উৎস্যও পাওয়া যায় ঐ প্রাচীন গ্রীসেই। এলেইন হফম্যান বারুচের মতে প্লেটো “নারীর পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও যৌন সমতার জন্য যুক্তি প্রদান করেছিলেন। প্লেটো তার আদর্শ নগর রাষ্ট্রে যে শ্রেণীগুলোর উল্লেখ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণিটিতেও তিনি নারীদেরকে সদস্য হিসেবে বিবেচনা করেন। আর এই নারীরা শাসনো করেন, যুদ্ধও করেন।”[৫] প্লেটোর দ্য রিপাবলিক গ্রন্থে নারী বিষয়ক তার ধারণাগুলো প্রকাশ পায়। প্লেটো তার দ্য রিপাবলিক গ্রন্থে নৈতিক নগর রাষ্ট্র এবং নৈতিক মানুষের নিয়ম শৃঙ্খলা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে লিখেছিলেন।[৬] এটাই প্লেটোর সর্বোত্তম রচনা হিসেবে পরিচিত, এবং এটি বৌদ্ধিক ও ঐতিহাসিক উভয় দিক থেকেই দর্শন ও রাজনৈতিক তত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীর একটি অন্যতম প্রভাবশালী গ্রন্থ।[৭][৮]
প্লেটো তার দ্য রিপাবলিকের পঞ্চম অধ্যায়ে নারীর ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন, “কুকুর পুরুষ ও নারীতে বিভক্ত নাকি তারা সমানভাবেই শিকার করে, পাহাড়া দেয় ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে থাকে? নাকি আমরা কেবল পুরুষ কুকুরদেরকেই কেবলমাত্র পাহাড়া দেবার জন্য ব্যবহার করি আর স্ত্রী-কুকুরদেরকে তাদের বাসায় রেখে দেই যাতে তারা তাদের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে পারে ও লালন পালন করতে পারে?” দ্য রিপাবলিক গ্রন্থ বলছে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করবে, সমান শিক্ষা পাবে এবং রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সমানভাবে অংশীদার হবে। এক্ষেত্রে নারীদের বেলায় একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে, নারী তার সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করবে যার জন্য কম শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়।[৯]
‘রিপাবলিক’ গ্রন্থের পঞ্চম খণ্ডে প্লেটো আদর্শ রাষ্ট্রে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন নারীদের পুরুষদের মতই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আদর্শ রাষ্ট্রে তাদের কাজ শুধু ঘরে থেকে সন্তান পালন করা নয়। তারা সঙ্গীত চর্চা করবে, ব্যায়ামের অনুশীলন করবে এবং পুরুষদের মতই সামরিক নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা করবে। পুরুষদের মত সব কাজেই তারা অংশগ্রহণের উপযোগী, এমনকি প্রয়োজনীয় গুণাবলির অধিকারী হলে তাদের রাষ্ট্রের অভিভাবকদের কার্য সম্পাদন করার জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে। প্লেটো ব্যক্তিগত জীবন যাপনের পরিবর্তে যৌথ জীবন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেন। তিনি নারী ও পুরুষদের একই দৃষ্টিতে দেখেছেন। তার মতে, নারী ও পুরুষের ক্ষমতা সমান বলে দায়িত্ব ও কর্তব্য সমান। উভয়ের লালন-পালন ও শিক্ষা দীক্ষা হবে সমান। পুরুষেরা যেমন শিক্ষা-দীক্ষা, সংস্কৃতি ও শরীরচর্চার অধিকার পাবে নারীরাও তা পাবে। এমনকি নারীরা পুরুষদের ন্যায় যুদ্ধ বিদ্যাও শিখতে পারবে অর্থাৎ প্লেটোর মতে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না।
তার মতে যে শিক্ষা একজন পুরুষকে একজন যথার্থ রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে পরিণত করতে পারে সেই একই শিক্ষা একজন নারীকেও যথার্থ অভিভাবিকায় রূপায়িত করতে পারবে। প্লেটোর মতে, নারী ও পুরুষদের মধ্যে যে পার্থক্য তা মাত্রাগত পার্থক্য, গুণগত নয়। পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষে কোন বৈষম্য নেই। রাষ্ট্রের ঐক্য ও শক্তির স্বার্থে পুরুষের সাথে সাথে মেয়েরাও সমান এবং একই দায়িত্ব বহন করবে বলে প্লেটো উল্লেখ করেন। নারী ও পুরুষদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। আইনজীবী ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ নারী পুরুষদের যোগ্যতা অনুসারে নির্বাচন করবেন কাকে কোন্ কাজ দেয়া হবে। অর্থাৎ কে হবে সৈনিক, কে হবে দার্শনিক, কে হবে শ্রমিক তা নির্ধারিত হবে আইনজীবী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে। প্লেটো আরও বলেন যে, আইনজীবী এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ কর্তৃক নির্বাচিত নারী পুরুষগণ একই সাথে থাকবে এবং একই সাথে খাবে। তাদেরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে কিছু থাকবে না। সকলেই একই পরিবেশে প্রতিপালিত হবে। আর এভাবে একত্রে বসবাস করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হবে বলে প্লেটো মত প্রকাশ করেন। নারী-পুরুষ একই সাথে বসবাস করার ফলে যাতে করে মানবিক মূল্যবোধ না হারায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের। আর এভাবে বসবাস করায় রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপিত হবে।
তবে প্লেটো বিবাহিত নারীর ভূমিকা হিসেবে সুসন্তান লাভের বিষয়টিকে অনেক বড় করে দেখেছিলেন, একই কথা বিবাহিত পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এটা করতে গিয়ে তিনি বিবাহিত দম্পতির উপর রাষ্ট্রীয় তত্বাবধান সমর্থন করেন। এই ব্যাপারটা নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিস্বাধীনতাকে খর্ব করে। তার এই চিন্তার পেছনে বেশ কিছু কারণ ছিল। তৎকালীন এথেন্সে পরিবার ব্যবস্থা স্থায়ী বিবাহ বন্ধনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বিবাহ বন্ধন রচনা ও সন্তান উৎপাদনে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এ ব্যাপারটি ছিল সম্পূর্ণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্লেটো এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থাকে তার আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বলে মনে করেন। আর তাই তিনি এরূপ স্থায়ী বিবাহভিত্তিক পরিবার প্রথার বিলোপ সাধনপূর্বক এক অভিনব প্রজনন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। এই অভিনব পদ্ধতি অনুসারে বংশ বৃদ্ধির ব্যাপার নিয়ন্ত্রিত হবে রাষ্ট্র কর্তৃক এ ব্যবস্থা অনুসারে রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশিত উপযুক্ত মা-বাবারই সন্তান হতে পারবে এবং সন্তান সংখ্যাও নির্ধারিত হবে রাষ্ট্র কর্তৃক। রাষ্ট্র কর্তৃক নির্দেশিত নয় এমন কোন সন্তান হলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না এবং তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হবে। প্লেটোর সাম্যবাদ অনুসারে যেসব নারীর বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর তারাই কেবল সন্তানের মা হতে পারবে; আর যেসব পুরুষের বয়স ২৫ থেকে ৫৫ বৎসরের মধ্যে তারাই কেবল সন্তানের বাবা হতে পারবে। এই নির্ধারিত বয়সসীমার বাইরে যাদের সন্তান হবে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। প্লেটো আরও বলেন যে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বাধীনে নারী-পুরুষদের মিলনের ফলে যে সন্তানের জন্ম হবে তা সকলের সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে একই সাথে রাখা হবে। সন্তানদের ওপর কারও ব্যক্তিগত মালিকানা থাকবে না। এভাবেই প্লেটোর সাম্যবাদ প্রচলিত পরিবার প্রথার উচ্ছেদ সাধনপূর্বক সন্তানদের ওপর অভিভাবকদের যৌথ মালিকানা স্থাপন করে।
প্লেটোর মতে আদর্শ রাষ্ট্রে প্রজনন নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের উচ্চতর শ্রেণীর নরনারীর বিবাহ-সম্পর্ক রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এই নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হল যাতে রাষ্ট্রের কর্ম ভালভাবে সম্পাদিত হয় এবং সুসন্তান লাভ করা যায়। এই শ্রেণীর নর-নারীর সন্তানেরা রাষ্ট্র পরিচালনাধীন ধাত্রীগৃহে লালিত-পালিত হবে। তবে প্লেটো অনিয়ন্ত্রিত যৌন-বাসনা পূরণ করার কথা কখনও বলেননি। কারিগর শ্রেণীর লোকেরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হতে পারবে। তাদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কোন বাধা-নিষেধের কথা প্লেটো বলেননি। তার মতে একটি নারী কমিটি থাকবে যার কাজ হবে বিবাহের পর দশ বছর পর্যন্ত নব-দম্পতিদের তত্ত্বাবধান করা। বিবাহের পর দশ বছরের মধ্যে কোন সন্তান না হলে দম্পতি বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারী হবে। পুরুষেরা ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বৎসরের মধ্যে বিবাহ করবে। মেয়েদের বিবাহের বয়স হবে যোল থেকে কুড়ির ভেতর। দাম্পত্য জীবনে বিশ্বাস ভঙ্গ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুরুষদের পক্ষে সামরিক বিভাগে কাজ করার বয়স কুড়ি থেকে ষাট। স্ত্রীলোকেরা সন্তানধারনের পর এবং পঞ্চাশ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত সামরিক বিভাগে যোগদান করতে পারবে। প্লেটো মনে করতেন, যেহেতু বিবাহিত নরনারীর কর্তব্য ভাল সন্তানের জন্মদান করা, সেহেতু রাষ্ট্র কর্তৃক বিবাহিত নর-নারীর সম্পর্কের তত্ত্বাবধান অবাঞ্ছিত মনে হলেও তাকে সমর্থন করা চলে। তার মতে, উচ্চতর শ্ৰেণীগুলোই রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত মালিক হতে পারবে না বা পারিবারিক জীবন-যাপন করতে পারবে না। এদের জীবন-যাপনের প্রণালী হবে অত্যন্ত কঠোর। যাদের উপযুক্ত বয়স, রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের দ্বারা তাদের যৌন জীবন নিয়ন্ত্রিত হবে এবং কাদের ঔরসজাত সন্তান তাদের পিতার অজান্তে রাষ্ট্রের দ্বারা প্রতিপালিত হবে। অনেকের মতে, প্লেটোর এই জাতীয় সিদ্ধান্ত কষ্ট-কল্পিত এবং কুরুচিপূর্ণ। তবে অনেকের মতে, এ হল আত্মীয় পােষণ এবং পারিবারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মত অকল্যাণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার জন্য চরম প্রচেষ্টা।[১০]
প্রাচীন রোমে আদিনারীবাদী ধারণ
খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে স্টোইক দার্শনিক গাইয়াস মিউসোনিয়াস রুফাস (Gaius Musonius Rufus) এর লেখা ২১টি ডিসকোর্সের একটি ছিল “That Women Too Should Study Philosophy”, অর্থাৎ “নারীরও দর্শন পড়া উচিৎ”। এই ডিসকোর্সে তিনি দর্শনে নারীদের সমান শিক্ষার অধিকার থাকা উচিৎ বলে যুক্তি দেন। তিনি বলেন, “… কোন পুরুষ দর্শন ছাড়া যথার্থভাবে শিক্ষিত হতে পারেনা, একই কথা নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এছাড়া পুরুষের মতো নারীর মধ্যেও সত্য সদ্গুণের প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহ রয়েছে, এবং এটি অর্জন করার সামর্থ রয়েছে। একজন পুরুষ যেমন ভাল ও নৈতিক কাজের দ্বারা সুখ লাভ করে ও মন্দ কাজের দ্বারা দুঃখ লাভ করে, একই কথা নারীর বেলায়ও সত্য। যদি তাই হয় তাহলে কিকরে উত্তম জীবন যাপনের উপায় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন পুরুষের জন্য সঠিক হতে পারে, কিন্তু নারীর জন্য বেঠিক হয়ে যায়? আর এই উত্তম জীবন যাপনের জ্ঞানকেই তো দর্শন বলে।”[১১]
মুসলিম বিশ্বে আদিনারীবাদ
ইসলামের প্রথম দিকে নারী অধিকার
খ্রিস্টীয় ৭ম শতকে ইসলামের প্রথম দিকে নারী অধিকারের পরিবর্তনসমূহ বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং উত্তরাধিকারপ্রাপ্তিতে প্রভাব ফেলেছিল।[১২] অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ইসলাম অনুসারে, সেসময় আরব সমাজগুলোতে কন্যা শিশুহত্যার নিষেধাজ্ঞার ফলে সাধারণভাবে নারীর অবস্থার উন্নতি হয়েছিল, যদিও কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ইসলামের পূর্বে ও পরে উভয়ক্ষেত্রেই শিশুহত্যার চর্চা ছিল।[১৩] ইসলামী আইন অনুসারে, এই সময়ে বিবাহকে চুক্তি হিসেবে দেখা শুরু হয়, যেখানে নারীর সম্মতি (সক্রিয় সম্মতি বা মৌন সম্মতি) বাধ্যতামূলক ছিল।[১৪][১৫][১৬][১৭] “পূর্বে কন্যার পিতাকে বধূমূল্য (bride-price) হিসেবে যৌতুক দিতে হত, ইসলামী আইন অনুসারে বৈবাহিক উপহার হিসেবে যৌতুক প্রদান করা হয় যা স্ত্রী তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে অধিকার করতে পারে।”[১৫][১৬]
উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট বলেন, মুহাম্মাদ তার সময়ে ও তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নারী অধিকার রক্ষায় কাজ করেছিলেন এবং নারী সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উন্নয়ন করেছিলেন – এমনটা বলা যেতে পারে। ওয়াট ব্যাখ্যা করেন, “ইসলাম যে সময়ে শুরু হয়েছিল, নারীদের অবস্থা ভয়াবহ ছিল – তাদের সম্পত্তির অধিকার ছিল না, তাদেরকে পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে দেখা হত, আর যদি কোন পুরুষের মৃত্যু হত তার সকল সম্পত্তি তার পুত্রদের কাছে চলে যেত”। মুহাম্মাদ “নারীদেরকে সম্পদ অধিকার, উত্তরাধিকার, শিক্ষা ও বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার দান করে তাদেরকে মৌলিক নিরাপত্তা প্রদান করেন”।[১৮] হাদ্দাদ এবং এসপোসিতো বলেন, “মুহম্মদ পারিবারিক জীবন, বিবাহ, শিক্ষা, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী অধিকার ও বিভিন্ন সুবিধাদির সুযোগ করে দিয়ে সমাজে নারীর অবস্থার উন্নয়ন করতে সাহায্য করেন”।[১৬]
ইসলাম নারীদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন এই ধারণার নারীবাদী সমালোচনাও রয়েছে। লেইলা আহমেদ বলেন, ইসলামী ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অন্তত কিছু নারী ইসলাম-পূর্ব যুগে সম্পদের উত্তরাধিকারী হতেন, ব্যাবসা পরিচালনা করতেন, নিজেদের স্বামী পছন্দ করে নিতেন, এবং সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত হতেন।[১৯] ফাতিমা মারনিসি একইভাবে যুক্তি দেখান, ইসলাম-পূর্ব যুগের রীতি নীতি নারীদের যৌনতা এবং নারীদের সামাজিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কম নয়, বরং অধিক মাত্রায় উদার ছিল।[২০]
ইসলামী স্বর্ণযুগ
৭ম শতকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কালের পরেই চলে আসে ইসলামী স্বর্ণযুগের সময়। সেসময় ইউরোপ যেখানে অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন, তখন প্রাচীন ইউরোপের জ্ঞানবিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে মুসলিম শাসনাধীন অঞ্চলগুলো জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় এগিয়ে গিয়েছিল। এই সময়টাকেই ইসলামী স্বর্ণযুগ বা গোল্ডেন এইজ অফ ইসলাম বলা হয়। পরবর্তীতে ইউরোপে রেনেসাঁ ও আধুনিক যুগের বিকাশে এই ইসলামী স্বর্ণযুগের বিশাল অবদান ছিল। ইসলামী স্বর্ণযুগের সময়কাল হল অষ্টম শতক থেকে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত।[২১][২২][২৩] অবশ্য এই যুগের শেষ কবে তা নিয়েও পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। পরবর্তীতে যেসময়ে ইউরোপে আধুনিকতার বিকাশ ঘটতে থাকে ততদিনে এই মুসলিম বিশ্ব স্বর্ণযুগ থেকে সরে এসে অন্ধকারে নিমজ্জিত অবস্থায় প্রায়।
যাই হোক, আধুনিক যুগের পূর্বে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক নারীবাদী আন্দোলন দেখা যায়নি। কিন্তু ইসলামী স্বর্ণযুগের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন যারা নারী অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের উন্নতির জন্য দাবি করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে মধ্যযুগীয় রহস্যবাদী ও দার্শনিক ইবনে আরাবী এর কথা বলা যায়। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নবী হিসেবে নারীর চেয়ে পুরুষ অধিক আনুকূল্য লাভ করেছে। কিন্তু পুরুষের মত নারীও ওয়ালি হতে সক্ষম, তারাও আধ্যাত্মিক কার্যসমূহে মনোনিবেশ করতে পারেন।[২৪] ইসলামী স্বর্ণযুগে নারীদের অবস্থা বিশেষভাবে আলোচ্য। এখান থেকে বোঝা যায় ইসলামী স্বর্ণযুগে নারীরা অন্যান্য অঞ্চলের নারীদের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন। সেইসময়ে নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাক।
শিক্ষা
সম্পদশালী সম্ভ্রান্ত নারীগণ প্রায়ই ইসলাম ধর্মীয় এবং ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ দান করত, যদিও বিংশ শতকের পূর্বে এগুলোর মধ্যে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই নারী শিক্ষার্থী ভর্তি হত। যেমন, ফাতিমা আল-ফিহরি ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে আল কারাওউইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু ১৯০০ এর পরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা শুরু করে (যাদের মধ্যে ফাতিমা আল-কাব্বাজ উল্লেখযোগ্য)। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকের আইয়ুবীয় রাজবংশের বেলায়ও এই ব্যাপারটি দেখা যায়। দামেস্কোতে ১৬০টি মসজিদ ও মাদ্রাসা তৈরি করা হয়, এর মধ্যে নারীগণ ২৬টিতে ওয়াকফ ব্যবস্থায় (দাতব্য ট্রাস্ট বা ট্রাস্ট আইন) অর্থ দান করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকদের অর্ধেকই ছিল নারী।[২৫]
১২শ শতকের সুন্নি আলেম ইবনে আসাকির এর মতে, নারী শিক্ষার সুযোগ ছিল। তিনি বলেন বালিকা ও নারীরা শিক্ষাগ্রহণ করে ইজাজাহ্ (প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী) গ্রহণ করতে পারতেন এবং উলেমা ও শিক্ষিকা হতে পারতেন। এটি বিশেষ করে শিক্ষিত এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ পরিবারেই দেখা যেত, যেখানে পুত্র ও কন্যা উভয়ের জন্যই সর্বোচ্চ সাম্ভাব্য শিক্ষা নিশ্চিত করা হত।[২৬] ইবনে আসাকির নিজেই ৮০ জন ভিন্ন ভিন্ন নারী শিক্ষিকার কাছে পড়াশুনা করেছেন। মুহাম্মাদ মদিনায় নারীদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহীদের জন্য প্রশংসা করেছিলেন:[২৭] “আনসার নারীরা কতই চমৎকার; লজ্জা তাদেরকে ধর্মশিক্ষায় শিক্ষিত হতে আটকাতে পারেনি।”
নারীদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করা খুব বিরল ছিল। তারা অনানুষ্ঠানিক বক্তৃতা এবং মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ক্ষেত্রের শিক্ষা অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতেন। কোন কোন পুরুষ এই চর্চাকে অনুমোদন করতেন না, যেমন মুহাম্মাদ ইবনে আল-হাজ (মৃত্যু ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ) সেই সময়ে নারীদের এই আচরণ ও এরকম অনানুষ্ঠানিত শিক্ষাগ্রহণের উপর বিতৃষ্ণ ছিলেন।[২৮]
মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন, “[ভাবুন] একজন শায়খের কাছ থেকে ধর্মগ্রন্থ [এর আবৃত্তি] শোনার সময় সকলে যখন একত্রিত হয় তখন নারীগণ কী করে। সেখানে নারীরাও ধর্মগ্রন্থের বাণী শোনার জন্য একত্রিত হয়। পুরুষেরা একদিকে বসে থাকে, নারীরা তাদের মুখোমুখি বসে। কখনও কখনও এও দেখা যায় যে, কোন নারী দাঁড়ালো, আবার বসে পড়ল, আবার উচ্চস্বরে আওয়াজ করল। এছাড়া তার আওরাহ্ সকলের সামনে চলে আসে। যেখানে নিজেদের গৃহেই নারীদের এরকম প্রকাশ নিষিদ্ধ, সেখানে মসজিদে পুরুষের সামনে এরকম আচরণ কিভাবে অনুমোদিত হতে পারে?” (‘আওরাহ্’ (Awra) বলতে নারীর শরীরের সেই অংশগুলোকে বোঝানো হয় যাকে ইসলাম অনুসারে ঢেকে রাখা উচিৎ।)
মধ্যযুগে নারীর প্রসঙ্গে আব্দুল হাকিম মুরাদ লেখেন, প্রাচ্যবাদী ইগনাজ গোল্ডজিহার দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগীয় হাদিস পণ্ডিতদের মধ্যে সম্ভবত পনের শতাংশ ছিল নারী, তারা মসজিদে শিক্ষাদান করতেন এবং নিষ্ঠার ও নৈতিকতার জন্য তারা সর্বজনীনভাবে তারা প্রশংসিত ছিলেন। কায়রোতে সাকলাতুনিয়া মাদ্রাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে নারীর দ্বারা অর্থায়ন হত, এবং কেবল নারীরাই সেগুলোতে পড়াতেন ও কাজ করতেন।[২৯] পঞ্চদশ শতাব্দীতে, আল-সাখাভী তার সমগ্র ১২ খন্ডের জীবনী-সংক্রান্ত অভিধান দাও আল-লামি নামক গ্রন্থটিকে নারী পণ্ডিতদেরকে উৎসর্গ করেন, সেই গ্রন্থে ১,০৭৫ জন নারী পণ্ডিতের কথা উল্লেখ করা হয়।[৩০]
নাগরিক ও সামরিক পেশা
খিলাফতের সময় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় পটভূমি থেকে শ্রমশক্তি এসেছে, সেই সময়ে পুরুষ ও নারী উভয়ই বিভিন্ন পেশা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।[৩১] সেইসময় নারীরা প্রাইমারি সেক্টর (উদাহরণস্বরূপ কৃষক হিসাবে), সেকেন্ডারি সেক্টর (নির্মাণ শ্রমিক, বস্ত্রশিল্পে রং দেয়া ও চড়কার কাজ ইত্যাদি) এবং টারশিয়ারি সেক্টরের (বিনিয়োগকারী, চিকিৎসক, সেবিকা, গিল্ড এর প্রধান, দালাল, পাইকার, ঋণদাতা, পণ্ডিত ইত্যাদি) বিস্তৃত পরিসরের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্র্যময় পেশায় জড়িত ছিল।[৩২][৩৩] মুসলিম নারী সেই সময়কার বস্ত্রশিল্পের কিছু শাখা যেমন স্পিনিং, ডায়িং ও এমব্রয়ডারিতে একচেটিয়া ছিল।[৩২] সেই সময় বস্ত্রশিল্প ছিল সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বেশি বিশেষায়িত ও বাজারমুখী শিল্প।
১২শ শতাব্দীতে ইসলামী দার্শনিক ও কাজি (বিচারক) ইবনে রুশদ (পাশ্চাত্যে যিনি আভেরোস নামে পরিচিত) প্লেটোর দ্য রিপাব্লিকের উপর একটি ভাষ্য রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি যৌনতার সমতা সম্পর্কে প্লেটোর মতামতগুলোকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, পুরুষরা নারীর চেয়ে শক্তিশালী হলেও নারীর পক্ষে পুরুষের মত কিছু কর্তব্য পালন করা সম্ভব। তিনি তার বিদায়াত আল-মুজতাহিদ (বিশিষ্ট বিচারকদের প্রথম পাঠ) গ্রন্থে তিনি আরও বলেন যে, এই কর্তব্যগুলোর মধ্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করা অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। সমাজের নারীরা কেবল মা এবং স্ত্রী এর ভূমিকা পালন করাতে সীমাবদ্ধ রয়েছে – এই বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।[৩৪] মুসলিম ইতিহাসের প্রথম দিকে, মুসলিম বিজয় ও ফিতনায় (গৃহযুদ্ধ) সৈন্য বা সেনাধ্যক্ষ হিসাবে কাজ করেছে এরকম উল্লেখযোগ্য নারীর উদাহরণ দেয়া যায়, যেমন নুসাইবাহ্ বিনতে ক্বাব আল মাজিনিয়াহ,[৩৫] আয়েশা,[৩৬] খাওলাহ্ এবং ওয়াফেইরা।[৩৭]
সম্পত্তি, বিবাহ ও অন্যান্য অধিকার
ইসলামী আইনের অধীনে নারীর উত্তরাধিকার হওয়া ও উত্তরাধিকার প্রদানের; স্বাধীনভাবে তাদের আর্থিক বিষয় পরিচালনার; এবং চুক্তির দ্বারা বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষমতা রয়েছে।[৩৮] হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর আইনের প্রফেসর নোয়া ফেল্ডম্যান লিখেছেন, “লিঙ্গবাদ এর জন্য সাধারণ আইন এর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিবাহিত নারীদের মধ্যে সম্পত্তির অধিকার ছিল না, এবং তাদের স্বামী ব্যাতীত তাদের আইনগত ব্যক্তিত্বও ছিল না। ঔপনিবেশি আমলে যখন ব্রিটিশরা তাদের উপনিবেশগুলোতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে শরিয়তের পরিবর্তে তাদের আইন প্রয়োগ করে, তখন মুসলিম বিবাহিত নারীরা তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় যা তারা ইসলামী আইনে সবসময় লাভ করত।”[৩৯]
১৫ শতক থেকে আধুনিক যুগের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব অস্বাভাবিক ছিল, সেসময় মুসলিম বিশ্বে বিবাহ বিচ্ছেদ (তালাক) এর হার তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা ছিল। অন্তত একটি গবেষণা অনুযায়ী মামলুক সালতানাত এবং অটোমান সাম্রাজ্যে প্রথম দিকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় বেশি ছিল।[৪০] ১৫ শতকের মিশরে আল-সাখাভী ৫০০ জন নারীর বৈবাহিক ইতিহাস নথিবদ্ধ করেছিলেন, যা মধ্যযুগের বিবাহের সবচেয়ে বড় নমুনা। সেখান থেকে দেখা যায়, মিশর ও সিরিয়ার মামলুক সালতানাতের অন্তত এক তৃতীয়াংশ নারী একাধিক বিবাহ করেছিলেন, এবং অনেকে তিনবার বা তারও বেশি বিবাহ করেছিলেন।[৪১]
তথ্যসূত্র
১। Botting Eileen H, Houser Sarah L. “Drawing the Line of Equality: Hannah Mather Crocker on Women’s Rights”. American Political Science Review (2006), 100, pp. 265–278.
২। Nancy F. Cott, 1987. The Grounding of Modern Feminism. New Haven: Yale University Press.
৩। Karen M. Offen, 2000. European Feminisms, 1700–1950: A Political History. Stanford: Stanford University Press.
৪। Ferguson, Margaret. Feminism in time. Modern Language Quarterly 2004 65(1), pp. 7–27
৫। Baruch, Elaine Hoffman, Women in Men’s Utopias, in Rohrlich, Ruby, & Elaine Hoffman Baruch, eds., Women in Search of Utopia, op. cit., p. [209] and see p. 211 (Plato supporting “child care” so women could be soldiers), citing, at p. [209] n. 1, Plato, trans. Francis MacDonald Cornford, The Republic (N.Y.: Oxford Univ. Press, 1973), Book V.
৬। Brickhouse, Thomas and Smith, Nicholas D. Plato (c. 427–347 BC), The Internet Encyclopedia of Philosophy, University of Tennessee, cf. Dating Plato’s Dialogues.
৭। National Public Radio (August 8, 2007). Plato’s ‘Republic’ Still Influential, Author Says. Talk of the Nation.
৮। Plato: The Republic. Plato: His Philosophy and his life, allphilosophers.com
৯। Plato। “The Republic”। classics.mit.edu। Translated by Benjamin Jowett। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪।
১০। মোহাম্মদ, নূরনবী (২০১৪)। পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস (প্রাচীন ও মধ্যযুগ)। ঢাকা: কাকলী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৮৪–২৮১। আইএসবিএন ISBN 984-70133-0363-3 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)।
১১। “Musonius: The Roman Socrates”। Classical Wisdom। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৪।
১২। “”Women and Islam” in ”Oxford Islamic Studies Online””। Oxfordislamicstudies.com। ২০০৮-০৫-০৬। ডিওআই:10.1093/0198297688.003.0006। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-৩০।
১৩। Giladi, Avner (মে ১৯৯০)। “Some Observations on Infanticide In Medieval Muslim Society”। International Journal of Middle East Studies। 22 (2): 185–200। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৮।
১৪। “Sahih al-Bukhari » Book of Wedlock, Marriage (Nikaah)”। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০২।
১৫। Khadduri, Majid. Socialist Iraq: A Study in Iraqi Politics since 1968. Washington: Middle East Institute, 1978. Print.
১৬। Esposito, John L. Islam: The Straight Path. New York: Oxford UP, 1998. Print
১৭। Esposito, John L. Islam: The Straight Path. New York: Oxford UP, 1998. N. page 339. Print.
১৮। Watt, W. Montgomery. Islamic Creeds: A Selection. Edinburgh: Edinburgh UP, 1994. Print.
১৯। Leila Ahmed, Women and the Advent of Islam, Signs: Journal of Women in Culture and Society, Vol. 11, No. 4, pp. 665-691
২০। Mernissi, Fatima (১৯৭৫)। Beyond the Veil: Male-female Dynamics in Modern Muslim Society। Saqi Books। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 9780863564413।
২১। George Saliba (1994), A History of Arabic Astronomy: Planetary Theories During the Golden Age of Islam, pp. 245, 250, 256–57. New York University Press, আইএসবিএন ০-৮১৪৭-৮০২৩-৭.
২২। King, David A. (১৯৮৩)। “The Astronomy of the Mamluks”। Isis। 74 (4): 531–55। ডিওআই:10.1086/353360।
২৩। Hassan, Ahmad Y (১৯৯৬)। “Factors Behind the Decline of Islamic Science After the Sixteenth Century”। Sharifah Shifa Al-Attas। Islam and the Challenge of Modernity, Proceedings of the Inaugural Symposium on Islam and the Challenge of Modernity: Historical and Contemporary Contexts, Kuala Lumpur, August 1–5, 1994। International Institute of Islamic Thought and Civilization (ISTAC)। পৃষ্ঠা 351–99। ২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
২৪। Hakim, Souad (২০০২), “Ibn ‘Arabî’s Twofold Perception of Woman: Woman as Human Being and Cosmic Principle”, Journal of the Muhyiddin Ibn ‘Arabi Society, 31: 1–29
২৫। Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 197, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
২৬। Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 196 & 198, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
২৭। Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 196, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
২৮। Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 198, আইএসবিএন 978-0-313-32270-9
২৯। Abdal Hakim Murad। “Islam, Irigaray, and the retrieval of Gender”। Masud.co.uk। ২০১২-০৫-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৮-১৩।
৩০। Guity Nashat, Lois Beck (২০০৩), Women in Iran from the Rise of Islam to 1800, University of Illinois Press, পৃষ্ঠা 69, আইএসবিএন 978-0-252-07121-8
৩১। Maya Shatzmiller, pp. 6–7.
৩২। Maya Shatzmiller (1994), Labour in the Medieval Islamic World, Brill Publishers, আইএসবিএন ৯০-০৪-০৯৮৯৬-৮, pp. 400–1
৩৩। Maya Shatzmiller, pp. 350–62.
৩৪। Belo, Catarina (২০০৯)। “Some Considerations on Averroes’ Views Regarding Women and Their Role in Society”। Journal of Islamic Studies। 20 (1): 6-15। ডিওআই:10.1093/jis/etn061।
৩৫। “ABCNEWS.com : The Cost of Women in Combat”। realnews247.com। ২০১০-১২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৫।
৩৬। Black, Edwin (২০০৪), Banking on Baghdad: Inside Iraq’s 7,000 Year History of War, Profit, and Conflict, John Wiley and Sons, পৃষ্ঠা 34, আইএসবিএন 978-0-471-70895-7
৩৭। Hale, Sarah Josepha Buell (১৮৫৩), Woman’s Record: Or, Sketches of All Distinguished Women, from “The Beginning Till A.D. 1850, Arranged in Four Eras, with Selections from Female Writers of Every Age, Harper Brothers, পৃষ্ঠা 120
৩৮। Badr, Gamal M.; Mayer, Ann Elizabeth (১৯৮৪), “Islamic Criminal Justice”, The American Journal of Comparative Law, 32 (1): 167–169, জেস্টোর 840274, ডিওআই:10.2307/840274
৩৯। Noah Feldman (মার্চ ১৬, ২০০৮)। “Why Shariah?”। New York Times। ২০১২-১১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-০৫।
৪০। Rapoport, Yossef (২০০৫), Marriage, Money and Divorce in Medieval Islamic Society, Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 2, আইএসবিএন 978-0-521-84715-5
৪১। Rapoport, Yossef (২০০৫), Marriage, Money and Divorce in Medieval Islamic Society, Cambridge University Press, পৃষ্ঠা 5–6, আইএসবিএন 978-0-521-84715-5
Be the first to write a comment.