
একটা হাতকাটা টপস, একটা আঁটোসাটো জিন্স, এবং একজন নারীর একটা স্টেশনে দশমিনিটের অপমানের গল্প আদতে অনেক দীর্ঘ ও গভীর অসম্মানের গল্পটাই বলে। গল্পটা শুধু নারীর নির্দিষ্ট পোষাক আর ধর্মের মধ্যেকার সংঘর্ষের গল্প না। গল্পটা একটি নারী-বান্ধব দেশ গঠনে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতার গল্প, নাগরিক হিসেবে আমাদের মেরুকরণের গল্প, ভিন্ন মত ও চর্চার বহিঃপ্রকাশের পরাধীনতার গল্প।
নারী সরকার প্রধান দ্বারা পরিচালিত, জিডিপি ৮% এর দাবিদার, ক্রয়ক্ষমতা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়া, নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখা, ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে সেতু তৈরী করতে পারা এই ডিজিটাল বাংলাদেশে কেন নারী বান্ধব পাবলিক স্পেস তৈরী করা সম্ভব হয় না? কেন ধর্মের অজুহাতে ‘উন্নয়নের’ এই মহাবীর দেশে নারীকে পাবলিক স্পেসে তার পোশাকের জন্য হেনস্তা হতে হয়? দেশের শিক্ষা ব্যবস্হা, আইন-আদালত, বিবাহ-পরিবার-সন্তান-সম্পত্তি বিষয়ক নীতিমালা কেন এবং কার স্বার্থে এই ধরণের নারী-বিদ্ধেষী ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধকে পেলে পুষে বড় করে?
ছাপোষা যেই জনগণ এখন সাত চড়েও টু শব্দটা করে না, যেখানে মাথা নিচু করে থাকাটাই বেঁচে থাকার অন্যতম শর্ত, সেখানে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এক মাঝ বয়সী মহিলা কিভাবে বুঝে নেন যে ধর্মের নামে এদেশে আধুনিক পোষাক পরিহিত যেকোন নারীর শরীরে অনায়াসে দেদারসে নির্ভাবনায় হাত তোলা যায়, তাকে গালাগাল করা যায়?
কর্তৃপক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ধর্মের “শ্লীল-অশ্লীল” বয়ান শুনিয়ে মোরাল পুলিশিং করার সাহস এবং সহিংস আচরণ করে পার পাবার নিশ্চয়তা সাধারণ জনগণ কোথা থেকে পায়?
গণমাধ্যমকে কেন নারীর পাবলিক স্পেসে হেনস্তা হবার গল্প বলতে গিয়ে সে নারীর ‘কোনো এক স্থানে রাত্রিযাপন’ করার গল্প টেনে আনা লাগে? ‘রাত কাটানোর’ এই গল্প নারীর প্রতি কি ধরণের মূল্যবোধ উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনে তৎপর থাকে? এই প্রচারে আখেরে কার বাঞ্ছা পূরণ হয়?পোশাকের হিসাবটা তাই অনেক বড়। এই বড় অংকটাকেশুধুই ধর্মান্ধতার সূত্র দিয়ে যাতে আমরা না কষি।
লেখক আনমনা, পিএইচডি গবেষক
Be the first to write a comment.