পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা গণপরিবহন ব্যবস্থার একটা বহুল আলোচিত সমস্যা হলো- লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি সমস্যা। সাধারণত মানুষের বাসা বা অফিস থেকে বাস বা মেট্রো স্ট্রেশনের দূরত্ব ৪০০ মিটারের মধ্যে থাকলে মানুষ হেটেই যাওয়া আসা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে কিন্তু দূরত্ব যদি এর বেশি হয় তখন মানুষ বাস বা মেট্রো স্টেশনে যাওয়া আসা করতে অন্য কোন বাহনে চড়তে চায়। (সূত্র ১) কোন গণ পরিবহন ব্যবস্থার পক্ষেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হাবগুলো (বাস বা মেট্রো স্টেশন) এমন ঘন ঘন স্থাপন করা সম্ভব হয় না যে তা বেশিরভাগ মানুষের বসতির ৪০০ মিটারের মধ্যে থাকবে। ফলে যাদের বসবাস পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হাব থেকে কয়েক কিমি দূরে তাদের মধ্যে গণপরিবহনের বদলে ব্যক্তিগত বাহন ব্যবহারের প্রবণতা থেকেই যায়। এ কারণেই একটি গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সফল হতে হলে লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি সমস্যারও সমাধান করতে হয়। আর শহুরে গণপরিবহনের এই সমস্যার সস্তা ও পরিবেশ সম্মত সমাধানের একটা উপায় হলো ব্যাটারি চালিত ই-রিকশা যা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সফল ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
দিল্লী মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটির জন্য এখন পর্যন্ত মোট ৩৬টি স্টেশনে ৩০০ ব্যটারি চালিত ই-রিকশা চালু করেছে। পরিকল্পনা আছে আরো ১৫টি স্টেশন এলাকায় চালুর। মেট্রোস্টেশনের আশপাশের ৩/৪ কিমি এর মধ্যে যাতায়াতের জন্য অ্যাপের মাধ্যমে বুকিং করে মেট্রো থেকেই নেমে এই ই-রিকশা ব্যবহার করা যায়। প্রথম দুই কিমি এর জন্য ১০ রুপি এবং পরবর্তী প্রতি এক কিমি এর জন্য ৫ রুপি করে ভাড়া নেয়া হয়। ব্যাটারি রিকশার চার্জিং এর জন্য পৃথক চার্জিং স্টেশনও স্থাপন করা হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ব্যাটারি রিকশাগুলো তৈরীর জন্য GEM Vehicles এর সাথে এবং পরিচালনার জন্য ETO Pvt Ltd এর সাথে চুক্তি করেছে। (সূত্র ২)
ভারতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ই রিকশা ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেছে উবার। (সূত্র ৩) দিল্লীর পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে লক্ষ করে গড় উঠা একটা ই-রিকশা ভিত্তিক স্টার্টআপ হলো Oye! Rishaw। ২০১৭ সালে অ্যাপ ভিত্তিক ই-রিকশা সার্ভিসের এই কোম্পানিতে নিবন্ধিত রিকশা চালকের সংখ্যা ৭ হাজারেরও বেশি। (সূত্র ৪)

বায়ু দূষণের কমানোর উদ্দেশ্যে দিল্লী সরকারের পরিকল্পনা হলো ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ লাখ ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল নিবন্ধন করা। আর লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি হিসেবে ৩৫ হাজার দুই/তিন/চার চাকার বাহন এবং ২৫০টি সরকারি চার্জিং ও ব্যাটারি বদলের স্টেশন স্থাপন করা। আগামী তিন বছরের জন্য সকল ব্যাটারি চালিত বাহনের রোড ট্যাক্স ও রেজিস্ট্রেশান ফি মৌকুফ করা হয়েছে। (সূত্র ৫) এছাড়া দিল্লীতে প্রতিটি ই-রিকশার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ হাজার রুপি করে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৬ হাজার ব্যাটারি চালিত ই-রিকশার মালিককে ৩০ হাজার রুপি করে ভর্তুকি প্রদান করেন। (সূত্র ৬)

ফলে যে সব গ্রাম ও মফস্বলে গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই সেইসব স্থান ছাড়াও এমনকি শহুরে গণপরিবহন ব্যবস্থার অন্তর্গত অংশ হিসেবেও ব্যাটারি চালিত ই-রিকশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।
তথ্যসূত্র:
১ ) Eliminating Public Transit’s First-Mile/Last-Mile Problem, অ্যালেক্স গিবসন, জুলাই ৯, ২০২০
২) DMRC provides e-rickshaws for last mile connectivity, বিজনেস লাইন, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
৩) Uber launches E-rickshaws for first and last mile connectivity, উবারডটকম, ৩ নভেম্বর ২০২০
৪) oyerickshaw এর ওয়েবসাইট
৫) DMRC flags off ETO e-rickshaw fleet for last-mile connectivity, ইটিঅটো, ইকোনিমক টাইমস, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
৬) Kejriwal releases Rs 30,000 subsidy each for 6,000 e-rickshaw owners, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৮ জানুয়ারি, ২০২০
Be the first to write a comment.