আমি হাবিবা জাহান। একটি মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরী করছি। অফিসের কাজের অসম্ভব চাপের মাঝেই চেষ্টা করি নিজের স্বপ্ন বুননের। আর তারই ধারাবাহিকতায় আমার কন্যা লামিয়া বিনতে হোসেনকে শুরু করেছি ”সুইটার্ট”।

আমরা এখন “সুইটার্ট” এর কর্ণধার। এই কর্ণধার হয়ে ওঠার পেছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে। আজ সবার সাথে আমি বা আমরা একটু নতুন করে পরিচিত হতে চাই। তার আগে একটু ভূমিকা না দিলেই নয়। কথা দিচ্ছি খুব সংক্ষেপে শেষ করব। আমার মনে হয় সব মানুষের জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে। সে স্বপ্নগুলো অনেকে পূরণ করতে পারেন আবার অনেকে সেই স্বপ্নবীজটি বুনার আগেই হারিয়ে ফেলেন। আমার স্বপ্ন ছিল যে, আমি সবসময় নিজেকে স্বাবলম্বী দেখতে চেয়েছি। সেই জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং আলহামদুলিল্লাহ নিজেকে এখন মনে হয় একজন স্বাবলম্বী নারী বলতে পারি।
আমি শখের বশে রান্না করতাম স্কুল-কলেজের সময় থেকে, নিজের মত করে আমি আমার রেসিপি তৈরি করতাম। খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনার চেষ্টা করতাম। আমার এই শখ আমার মেয়ে লামিয়ার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। সে ও নিজে খাবার করে খেতে পছন্দ করে। আমার মত তারও বেকিং করা শখ। আমি ওর শখ বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে চেষ্টা করেছি।

আমার মেয়ে কেক বা বেকারি খাবার খুব পছন্দ করে। স্ন্যাকস বা যখন যা ইচ্ছে করে নিজে নিজে বানিয়ে খেতে চেষ্টা করতো। কিন্তু আমি খুব একটা কিচেনে যেতে দিতে চেতাম না, পড়াশুনার সময় নষ্ট হবে বা হাত কেটে বা পুড়ে যাওয়ার ও একটা ভয় করতাম। তাই ও যা খেতে চাইতো, তা বাসায় নিজে করে দিতে না পারলে অফিস থেকে আসার সময় কিনে নিয়ে আসতাম। বিপত্তিটা শুরু হলো করোনাকালীন সময়ে। আমি বাসা থেকে অফিস শুরু করলাম। তখন তো আর বাইরের সব খাবারই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, বাইরে যেতে পারি না, ভীষণ বন্দি বন্দি লাগছিল নিজেদের।

আমি মাঝে মাঝে কিছু খাবার তৈরী করে দিতাম। আমার মেয়েকে নিয়ে কেক, পেস্ট্রি, পিজা, থাই এবং চাইনিজ খাবার তৈরি শুরু করলাম। আমার যেহেতু বেকিং এর উপর ট্রেনিং নেয়া আছে তাই আমি আমার মেয়ে লামিয়াকেও  ভালো করেই ট্রেনিং দিলাম এবার। এরপর করোনাকালীন সময়ে পরিবারের সকলের জন্মদিন বা বিয়ে বার্ষিকী কেকগুলো তৈরি করে দিলাম এবং সেগুলো হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করলাম, যা কিনা এই করোনাকালীন সময়ে খুবই প্রয়োজনীয় একটি সেবা ছিল।

সুইটার্ট: জন্মদিনের কেক
সুইটার্ট: গায়ে হলুদের পালকি কেক

আমাদের দুইজনের শখ আজ একটি স্বপ্ন বীজ। যা মাত্র রোপন করা হয়েছে অর্থাৎ অনলাইনে একটি পেজ খোলা হয়েছে। খুব ছোট্ট সুন্দর একটা নাম দিয়েছি পেজটার “সুইটার্ট”। স্বপ্ন বীজ বুননের সাহস আর শক্তির যোগান দিয়েছে আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুরা। তাদের সকলের উৎসাহ, ভালবাসা ও সহযোগিতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ “সুইটার্ট” খুব ভালো ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

আমরা কেক, পিজা, পেস্ট্রি, থাই/চাইনিজ ফুড, ফ্রোজেন ফুড (সমুচা, চিকেন/ভেজিটেবল রোল), দেশী খাবার, ফ্রায়েড রাইস, ফ্রায়েড চিকেনসহ বিভিন্ন খাবার করে থাকি। নিয়ম অনুযায়ী যে দিন খাবারের ডেলিভারি দরকার তার অন্তত সাত দিন আগে অর্ডার করতে হবে। ক্লায়েন্টের সাথে তার পছন্দ/অপছন্দ জেনে বিষদ আলোচনা করে খাবার প্রস্তুত করি। বিশেষ করে কেক! ক্লায়েন্টের পছন্দের রং কিংবা ডিজাইনকেই আমরা গুরুত্ব দেই এবং সেভাবেই তৈরী করে দেই। খাবার প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখি। গ্রাহকের সেবার মান বাড়াতে আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।

সুইটার্ট: চাইনিজ ফুড এর অর্ডারের প্যাকেট

আমি মনে করি, একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমার নিজের মেয়েকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। কারণ কয়েক বছর আগেও এধরনের ব্যবসা করাকে সমাজের মানুষ গুরুত্বের সাথে নিতো না, অনেক সময় অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করতো। তাই, পরিবারের কেউ এধরনের কাজে যুক্ত হোক সেটি কেউ চাইতো না। কিন্তু এখন আমি নিজেই আমার মেয়েকে যুক্ত করেছি, নিজে যুক্ত হবার সাথে সাথে। এটি একটি নতুন অধ্যায়, নতুন যুদ্ধ, দিন বদলের গান…..

এভাবেই আমাদের সুইটার্ট ফুড ব্র্যান্ড নিয়ে সবার সাথে এগিয়ে যাবো ভবিষ্যতের দিকে সবার ভালবাসায়!