বাংলাদেশে গত দুই দশকে হিজাব ব্যবহারের পরিমাণ নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে । এই পোশাকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে । এইটা যে শুধু হঠাৎ করে আজকেই উঠে এসেছে হিজাব কেন্দ্রিক আলোচনা, সমালোচনা বিষয় এরকম না । থেকে থেকেই মাঝে মাঝেই আমরা হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে শক্ত মতামত দেখি, এমনকি ঘৃণা প্রকাশও দেখি । সবচেয়ে বিপত্তিকর ব্যাপারটা হলো আলোচনা সমালোচনা গুলো খুব বাইনারী । মানে একদল বলবেন হিজাব হচ্ছে অপ্রেশন আরেকদল বলবেন হিজাব হচ্ছে ফ্রিডম । একদল বলছেন হিজাব ব্যাক্তি পছন্দ আরেক দল বলছেন এইটা সম্পূর্ণ চাপিয়ে দেয়া । এর মাঝে কোন ইনবিট্যুইন ভাবনা নাই, চিন্তা নাই ।

বাংলাদেশে হিজাব এর বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রধান যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে সেগুলো মোটামুটি এরকম – হিজাব কি বাঙালী সংস্কৃতির অংশ হতে পারে ? হিজাব কি পলিটিক্যালী মোটিভেটেড কোন চয়েস ? এইটাকে কি উপর কোন মহল থেকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নারীর উপর? হিজাব কি মেয়েরা নিজেদের সিদ্ধান্তে পরছে না সমাজ এবং পরিবার তাদের বাধ্য করছে পড়তে ? র্ধমীয় বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে কি মেয়েরা হিজাব পরছে না এর পিছনে আর কোন কারণ থাকতে পারে ? হিজাব কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কি অর্থনৈতিক শ্রেণিভেদে ভিন্ন হচ্ছে ? হিজাব কি আসলেই নারীকে স্বাধীনতা দেয় না বেশি কাপরের আবডালে এটা নারীকে আরো বেশি পরাধীন করে ? নাকি হিজাব বিস্তার এর ক্ষেত্রে গভীর কোন রাজনৈতিক সরযন্ত্র আছে ? সবচেয়ে বড় বিষয় পোশাক হিসেবে হিজাব নিয়ে যত আলোচনা সমালোচনা বাংলাদেশে হয় আর কোন পোশাক নিয়ে বোধয় এত সমালোচনা হতে দেখা যায় না । এইটাও একটা প্রশ্ন তৈরী করে এই একটা পোশাক নিয়ে এত আলোচনার আবশ্যকতা আছে কিনা ?   

এই প্রত্যেকটা প্রশ্ন আসলে একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত এবং জড়ানো। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আলাদা আলাদাভাবে খুঁজতে গেলে সেইটা ভুল মেসেজও দিতে পারে । 

পোশাকের চরিত্র যে ভাবে র্নিধারিত হয়: 

শুধু হিজাব না, কোন পোশাকই ব্যক্তি মানুষের স্বাধীন পছন্দ থেকে আসে না । পোশাক নির্বাচনে ব্যক্তির অর্থনৈতিক অবস্থান, সামাজিক সাংস্কৃতিক কাঠামো এবং ভৌগলিক অবস্থান মানে আবহাওয়া মুখ্য ভূমিকা পালন করে বা শর্ত হিসেবে কাজ করে । আধুনিক সময়ে এই তিনটি শর্তকে মাথায় রেখে কনজিউমার ওয়ার্ল্ড তার প্রডাক্ট তৈরী করে । তারপর উৎপাদন মূল্যের সাথে ক্রয় ক্ষমতা তুলনা করে  সেইটা ঐ অর্থনৈতিক শ্রেণির ভোক্তা যে অঞ্চলে থাকে সেই আঞ্চলিক বাজারে নিয়ে যায় । এবং ভোক্তা তার ক্রয় ক্ষমতা অনুযায়ীই তার পোশাকটি বাজার থেকে র্নিবাচন করেন এবং পরেন । বাজারে যে পোশাকের চল নাই সে পোশাক ভোক্তা চাইলেও বাজার থেকে কিনতে পারে না । আবার ঠিক উল্টা পুঁজি বাজার ভোক্তার চাহিদা যাচাই করে এবং সমাজ সংস্কৃতি অনুযায়ী কোন প্রডাক্ট (পোশাকের ক্ষেত্রে এইটাকে ফ্যাশন বলতে পারেন )ঐ র্নিদিষ্ট বাজারে চলবে সেইটা অনুমান করে এবং বাজারে সেই অনুযায়ী প্রডাক্ট নিয়ে আসে । এইটা মোটা দাগে পুঁজি বাজারের চরিত্র ।

ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত

এর বাইরে কোন দেশ বা অঞ্চলের পোশাক কেমন হবে সেইটার একটা ঐতিহাসিক ধারাবাহিক প্রেক্ষাপটও থাকে । আর যারা লিঙ্গীয় রাজনীতিতে সমাজকে বিশ্লেষণ করে তারা মনে করে নারীর পোশাক র্নিবাচনের ক্ষেত্রে পুরুষ বা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ সিদ্ধান্ত নেয় বা মুখ্য ভূমিকা পালন করে । তার মানে পোশাকের চরিত্র কেমন হবে সেইটা র্নিধারনের ক্ষেত্রে আমরা মোটা দাগে চারটি ডাইমেনশন পেলাম অর্থনৈতিক অবস্থান মানে ভোক্তার শ্রেনি মানে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা, ভোক্তার সামাজিক সংস্কৃতিক কাঠামো, ভৌগলিক অবস্থান, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের শর্ত । এর সাথে পোশাকের ধরন কেমন হবে সেইখানে আরেকটা ডাইমেনশন যুক্ত হতে পারে, জিও পলিটিক্স । মানে অনেক সময় আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক রাজনীতি পোশাক এর ধরন র্নিধারনের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারে । এই পঞ্চম ডাইমেনশন মানে জিও পলিটিক্স যখন যুক্ত হয় তখনই পোশাক ধারনাটা অনেক বেশি সামনে চলে আসে, আলোচিত হয় বা সমালোচিত হয় ।  যেমন গান্ধীর চরকায় বোনা মোটা কাপড় তার স্বদেশী আন্দলনে আলোচিত হয়ে আছে । “মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দিন দুঃখিনী মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই ”, “ স্বদেশী পন্য কিনে হও ধন্য” এই ধরনের গান বা শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে আমার বুঝতে পারি দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বা জাতীয়তাবোধকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে পোশাক একটি রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছে । মানে জিও পলিটিকস কে পোশাকের সাথে যুক্ত করা হয়েছে । পশ্চিমা নেক টাই ধারনা যেমন উঠে এসেছে কৃষ্ণাংগ দাস প্রথাকে কাউন্টার দিয়ে । সেরকম মুজিব কোট, জিন্নাহ টুপি এই পোশাকগুলো রাজনৈতিক সিগনিফিকেন্স বহন করে । যেমন ভুটানে কোন রাজনৈতিক নেত্রীত্ব সাধারনত তাদের জাতীয় পোশাক ছাড়া কোন রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেয় না । ভারতের বিজেপী গেরুয়াকে রাজনৈতিক পোশাক হিসেবে সামনে নিয়ে আসছে । ৯/১১ এর পর পুরো বিশ্বেই মুসলিম নারীরা হিজাবকে একটি পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট হিসেবে দাড় করাতে পেরেছে । সবচেয়ে ইন্টারেসটিং ব্যপার আমেরিকায় মুসলিম ফ্যামিনিস্ট মেয়েরা হিজাবকে তাদের আইডেনটিটি মুভমেন্ট এর অংশ হিসেবে দাড় করিয়েছে । এবং ৯/১১ পর ভৌগলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে হিজাবের যে প্রভাব বা ভূমিকা সেইটা আলোচনার দাবী রাখে ।

হিজাবের প্রসারে বাংলাদেশে বাজার অর্থনতির ভূমিকা :

বাজার অর্থনীতিতে হিজাবের ভোক্তা খুব সুর্নিদিষ্ট, মুসলিম নারী । বাজার অর্থনীতির ধর্ম হচ্ছে সে ভোক্তা চিহ্নিত করে সম্ভাবনা দেখবে, সেই অনুযায়ী প্রডাক্ট ডিজাইন করবে এবং সেইটা বাজারে তুলবে । বাজারে সাধারনত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা সুষ্পষ্ট থাকে সেইটা বোঝা যায় কিন্তু এর বাইরে লাক্সারী আইটেম বা নিত্য প্রয়জনীয় নয় এরকম প্রডাক্ট এর চাহিদা হিডেন থাকে মানে সুসপষ্ট ভাবে থাকে না । যে কারনে হিডেন চাহিদাকে পুঁজি বাজার প্রমোট করে, কখনো কখনো কৃত্রিম চাহিদা তৈরীও করে । যেমন ধরেন লরিয়াল এর চুল রঙ করার প্রডাক্ট । এখন এই যে নারী বা পুরুষ হিসেবে চুল রং করলে আমার ভালো লাগবে বা আমাকে আধুনিক দেখাবে বাংলাদেশে এই বোধ বা এই ফ্যাশন সেন্সটিকে কে আনলো ? কোথা থেকে আসল ? লরিয়াল এর মতো কনজিউমার প্রডাক্ট কম্পানিগুলো বিভিন্ন গনমাধ্যম ব্যবহার করে প্রথমে সাদা চুল কালো করা, তারপর কালো চুল রঙিন করার প্রচারণা ক্রমাগত করে গিয়েছে এবং একটা সময় ভোক্তা মনে করা শুরু করেছে চুল রং করলে আমাকে ভালো দেখাবে, আধুনিক দেখাবে । তারমানে পুঁজি এখানে কৃত্রিম চাহিদা তৈরী করে প্রডাক্ট বাজারে নিয়ে এসেছে ।

সেইখানে বাংলাদেশ হচ্ছে একটি মুসলিম প্রধান দেশ যার শতকার ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান ।  বাংলাদেশের মানুষ যে শুধু ভাব জগতে মুসলমান এরকম না তারা প্র্যাকটিশনার মুসলমান । চর্চার মাত্রা পার্থক্য করতে পারে কিন্তু ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্ম চর্চা করে এইটা ঘটমান বাস্তবতা । এইটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নাই । গোড়া মুসলিম, মডারেট মুসলিম, পারিবারিক ভাবে মুসলিম সে যে ফরমেই হোক ব্যাক্তি মনে করে সে মুসলমান । শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে পুঁজি বাজার আসলে তার কোন প্রডাক্ট নিয়ে আসবে ? এইটা কি অবশ্যম্ভাবী না যে পুঁজি মুসলমান ভোক্তাদের এই যে বাজার সেটা ধরার জন্য চেষ্টা করবে ? মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে যখন এক দেশের কনজিউমার প্রডাক্ট খুব সহজেই আরেক দেশে ঢুকে পরতে পারছে, সেইখানে একটা মুসলিম প্রধান দেশে অপর মুসলিম প্রধান দেশের প্রডাক্ট বাজারে ঢুকে পরবে এইটাই কি স্বাভাবিক না ? আপনি যদি কাশী বা ত্রিবেনী বা এই রকমের ধর্মীয় তীর্থ স্থানগুলোতে যান তাহলে ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক বাজার দেখবেন গড়েই উঠেছে ধর্মীয় আচার চর্চা সামগ্রী দিয়ে । পুঁজির ধর্ম সে যেখানে সম্ভাবনা দেখবে সেখানেই যাবে । ওই জন্যই শশ্মানের পাশে কাঠ চন্দনের দোকান থাকে, মসজিদের পাশে টুপির আর মন্দির এর পাশে ফুল প্রসাদের দোকান । ছোট পুঁজি বা বড় পুঁজি, যেখানে চাহিদা থাকবে পুঁজি সেখানে চাহিদা মোতাবেক প্রডাক্ট নিয়ে যাবে, হিডেন চাহিদা থাকলে প্রমোট করবে, কোন ধরনের চাহিদা না থাকলে কৃত্রিমভাবে চাহিদা তৈরী করবে । প্রডাক্ট হিসেবে হিজাবের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্ময় কেন হবে?      

হিজাব পরে জগিং,তাই নাইকি: ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত
প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, নতুন ফ্যাশন:ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত
Muslim woman to appear in Playboy in a hijab – CNN Style

খেয়াল করে দেখবেন বাংলাদেশে যেই গতিতে কাপড়ের মার্কেট বেড়েছে সমানুপাতিক হারে নারীদের মধ্যে হিজাব পরাও বেড়েছে । আমরা বলি যে আজ থেকে বিশ বছর আগেও মানে বিংশ শতকের গোড়ার দিকেও আমাদের মা খালারা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারীরা এই হারে বোরখা পরতেন না । ১৯৮০/ ১৯৭০ সালের মধ্যবিত্ত নারীদের ছবি শেয়ার দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছেন তখন আমাদের নারীরা হিজাব পরত না । খেয়াল করে দেখেন ১৯৭০, ১৯৮০ কিংবা ২০০০ সালের দিকেও আমাদের মার্কেট এর সংখ্যা কত ছিলো ? ঢাকা শহড়েই গাউসিয়া, নিউ মার্কেট ছাড়া আর কয়টা শপিং এর দোকান বা মার্কেট ছিল? বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক মদ্দা কথা পুরা ঢাকা শহর জুড়ে এখন আপনি শুধু মার্কেটই দেখবেন । গত বিশ বছরে শুধু যে বিভাগীয় পর্যায় আধুনিক মার্কেট হয়েছে বিষয়টা এরকম না জেলা উপজেলা পর্যায় মার্কেট ছড়িয়ে গেছে । যে প্রডাক্ট যে দামে আপনি ঢাকা শহরে পাবেন একই গোত্রের প্রডাক্ট আরেকটু নিম্ন মানে আরেকটু কম দামে আপনি পাবেন জেলা শহরে, তারও চেয়ে আরেকটু নিম্ন মানে আরেকটু কম দামে উপজেলা শহরে ।

হিজাব এর ক্ষেত্রও তাই হয়েছে দারুন ফ্যাশেনাবল দামী হিজাব বিভাগীয় শহরে বিক্রি হলে, জেলা শহরে তার চেয়ে একটু কম দামে হিজাবের অন্য ভার্শন চলে গেছে, উপজেলা পর্যায় তার চেয়ে আরেকটু নিম্ন মানের প্রডাক্ট চলে গেছে । কিন্তু হিজাব বড় শহর থেকে ছোট শহর হয়ে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে । পুঁজি ভোক্তা ধরার জন্য সবসময়ই প্রডাক্টে ভেরিয়েশন আনে । আর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ভ্যারিয়েশন আনতে না পারলে লাভ করতে পারবে না । সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, হিজাব, প্যান্ট শার্ট, ফতুয়া যত ভেরিয়েশন সামনে থাকবে ভোক্তা নারী তত কিনবে পুঁজি তত প্রফিট করবে ।

হিজাব বাঙালী সংস্কৃতির অংশ কিনা?

প্রথম বিষয় হলো সংস্কৃতি কোন কনস্ট্যান্ট বা স্ট্যাটিকি বিষয় না । একটি সমাজ বা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি সদা পরিবর্তনশীল । এইটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচেছ । প্রতিনিয়ত এর মধ্যে অভিযোজন, বিয়োজন ঘটছে । তবে সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনটা ধীরগতিতে হওয়ায় এইটাকে চট করে চোখের দেখায় ধরা যায় না । সময়ের সাথে ঘটনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে এই পরিবর্তনের প্রভাবটা বোঝা যায়, টের পাওয়া যায় । সমাজের মানুষের খাদ্যাভাস , শিক্ষার হার, উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহনের হার বাড়া বা কমা, ভিন্ন জাতিসত্ত্বার সাথে মিশ্রণ, ভিন্ন জাতি সত্ত্বার শিল্প সাহিত্যে অনুপ্রবেশ এই বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে একটি সমাজের সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এই বিশ্বায়নের যুগে সাংস্কৃতিক এই পরিবর্তন আরও অবশ্যম্ভাবী । অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সাংস্কৃতিক ঢেউ ইউরোপ থেকে রাশিয়া হয়ে মধ্য প্রাচ্যকে যুক্ত করে ডিশ এন্টেনা এবং ইন্টারেনেট এর মধ্যে দিয়ে ঢুকে পরছে বাংলাদেশের বেড রুমে । মোবাইলে দাবী করা হচ্ছে ফোর জী চলে । তাহলে বাঙালী সংস্কৃতি বলে আসলে আপনি কোনটাকে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছেন ? নদী সব মরে যাচ্ছে মাছ কোথায় পাবে ? সেইখানে মাছে ভাতে বাঙালী বলে যে আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির বড়াই ছিলো সেইটা পরিবর্তিত হতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রাম এবং শহরের সুযোগ সুবিধা, গঠনে যত পার্থক্য সুচিত হবে দুই সমাজের সংস্কৃতিতেও তত র্পাথক্য তৈরী হবে ।

একটা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির অনেকগুলো অংশের একটা অংশ হলো পোশাক । এবং এই পোশাক বা ফ্যাশনটাই হচ্ছে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল এবং সহজে পরিবর্তনশীল । ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ধরে নেয়া হয় এক দশক । মোটামুটি এক ধরনের ফ্যাশন সামনে পিছনে মিলে দশ বছর টিকে । দশ বছর পর ফ্যাশনের একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসে । এখন এই পোশাকের  পরিবর্তনটা দিয়ে আসলে একটা জনগোষ্ঠী সামনে আগাচ্ছে না পিছনে যাচ্ছে সেইটা মাপা সম্ভব কিনা বা আদৌ মাপাটা সঠিক হয় কিনা ? আর বাঙালি সংস্কৃতি বলতে আসলে আমরা কি বুঝি ? ভাত মাছে শহুরে বাঙালি এখন আর শুধু তিন বেলা ভাত মাছ খায় না; রুটি,পাস্তা, নুডুলস খায় । রুটি পাকিস্তানি খাবার; পাস্তা, নুডুলস ইটালিয়ান খাবার । শহরের মোড়ে মোড়ে আমেরিকান ক্যান্টাকি ফ্রাইড চিকেন । বাঙালি পিঠা পুলিকে সরিয়ে দিয়ে ইউরোপিয়ান কেক পুডিং জায়গা করে নিয়েছে । হাডুডু কিংবা দাড়িয়াবান্ধা কে সরিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট । পুরুষের ধুতি, লুংগীকে সরিয়ে দিয়ে শতকরা ৯৯ ভাগ জায়গা করে নিয়েছে ইউরোপিয়ান প্যান্ট, শার্ট । তাহলে বাঙালিয়ানা কি শুধু নারীর পোশাকে রক্ষা হবে কিনা ? বা বাঙালি নারী বলতে আসলে আমি কি বুঝি ? শাড়ি ব্লাউজ পরা, বড় করে টিপ দেয়া নারী ? আমার মা, খালা, ফুপু, তাদের কন্যা সন্তান কাউকে কখনো আমি কপালে বড় টিপে দেখি নি । আমাদের পুরো গুষ্টির মধ্যে একমাত্র আমার এক বোন বড় টিপ পরতে পছন্দ করে । তাহলে বাঙালি নারীর সাজ পোশাক কি ? ঠিকই আছে ৬০/ ৭০ দশকে সেটা শাড়িই ছিলো তারপর সালোয়ার কামিজ আসল । সালোয়ার কামিজ তো পাকিস্তানি সংস্কৃতি, আমাদের না । কিন্তু আমাদের আবহাওয়ায় এইটা যায়, আমাদের দেশীয় নারীদের শরীরের কাঠামো অনুযায়ী এই পোশাকটা এডাপ্ট করা সহজ যেই কারনে খুব দ্রুত এই পোশাকটা সার্বজনীনতা পেয়েছে এবং এর উপযোগিতার কারনেই দীর্ঘস্থায়ীও হয়েছে ।

২০২০ এ যদি আপনি দেখেন পোশাকের সংস্কৃতিটা খবুই মিশ্র আকার ধারণ করেছে । শহরকেন্দ্রিক তরুনীরা সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, শাড়ি, হিজাব সবই পরে । যার যে্ইটা ভালো লাগে সে সেটা তার চাহিদা অনুযায়ী বাজার থেকে কিনে নিয়ে যায় । ফ্যাশন এখন সরাসরি গ্লোবাল বিষয় । শহুরে তরুনীরা ফ্যাশনের জন্য এখন তার বড় বোন বা পাড়া প্রতিবেশি কি পরছে সেইটা ফলো করে না । গ্লোবাল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে চোখ বুলায় বর্তমান গ্লোবাল ফ্যাশন ট্রেন্ড কি সেইটা বোঝার জন্য এবং সেই মোতাবেকই নিজের সাজ সজ্জা ফ্যাশন ঠিক করে । যেই দেশীয় মিডিয়ার প্রভাব বেশি সেই দেশীয় ফ্যাশন প্রভাব ফেলছে বেশি। আমার অবজারভেশনতো বলে ২০২০ তে বাঙালী নারীদের মধ্যে হিজাবের চেয়ে ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর সাজ সজ্জার প্রভাব অনেক বেশি । বাজারে হিজাব যত চলে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি চলে বিদেশী মেকাপ । কনসিলার, ফউন্ডেশন, বেইজ মেকাপ, ব্লাশন, আইশ্যাডো এত হরেক পদের মেকাপ এখন বাংলাদেশের আঞ্চলিক বাজারে বিক্রি হয় যেইটা আমাদের ৬০-৭০ দশকের মা খালারা কোনদিন হয়ত নামও শোনেনি । তাহলে বাঙালি নারীর মেকাপ কি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হবে, না হবে না ? যেহেতু ৭০ দশকে নারীরা এত মেকাপ দিত না তাহলে বর্তমানে মেকাপ দিলেই কি সেই নারীকে  বাঙালি নারী নয় বলে খারিজ করতে পারছি কিনা ? অথবা শহুরে তরুনীদের মধ্যে জিন্স ফতুয়া খুবই জনপ্রিয় দেখা যায় । জিন্স তো সরাসরি পশ্চিমা পোশাক । তাহলে জিন্স ফতুয়া পরা এই নারীরা বাঙালি নারী হিসেবে খারিজ হয়ে যায় কি না ? যদি না হয় তাহলে হিজাব কে বাঙালি নারীর ফ্যাশন জগতে এডাপটেশন ধরে নিতে আমাদের আপত্তিটা আসলে কোথায় ? এইটা বরং ভাবা জরুরী হিজাব পরলে বাঙালি নারী নয় বলে খারিজ করার পিছনে কি ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করছে ? কেন করছে? মদ্দা কথা বাঙালি নারীর সাংস্কৃতিক অবয়ব মাপার জন্য কোন মানদন্ড আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি কিনা ? মানে এই এই পরলে বাঙালি নারী হবে, না পরলে বাঙালি নারী বলা যাবে না । যদি কোন মানদন্ড দাঁড় করে থাকি তাহলে এই মানদন্ড দাঁড় করানোর অথরিটি আসলে আমাদের কে দিলো ?                                    

বাংলাদেশে মেয়েরা হিজাব কেন পরছে ?

এনজিওতে একটা কথা খুব ব্যবহার করা হয় যে কন্ঠ শোনা যায় না সেই কন্ঠ শোনার চেষ্টা কর । আমরা সেই সব কন্ঠই শুনি যেই কন্ঠস্বরগুলা খুব উচু স্বরে বাজে । যেই কন্ঠগুলো চাপা পরে থাকে তাদের কন্ঠস্বরগুলো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না । যে মেয়ে হিজাব পরে তাকে গিয়ে আমরা প্রশ্নটা করি না আপনি হিজাব কেন পরেন ? বাঙালি মধ্যবিত্ত হিসেবে সাংস্কৃতিকভাবেই আমরা ব্যক্তিগত জাজমেন্ট দিতে পছন্দ করি । ঘটমান বাস্তবতা যাই হোক আমাদের নিজেদের মাথায় কিছু এজাম্পশন থাকে, আমরা সেইটাকে মানদন্ড হিসেবে ধরে নিয়ে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দিয়ে দেই । মেয়েটি নিজের সিদ্ধান্তে হিজাব পরেনি, তার পরিবার বা তার স্বামী তাকে বাধ্য করেছে অথবা সমাজের চাপে মেয়েটি হিজাব পরেছে । এই কেন্দ্রিক গুগলে ভালো কোন র্সাভে গবেষনাও পেলাম না যেটা দিয়ে অনুমিত সিদ্ধান্তে পৌছানো যায় বাংলাদেশে এই এই কারনে মেয়েরা হিজাব পরে ।

প্রাথমিকভাবে অনলাইন থেকে পাওয়া আমি তিনটি গবেষনার ফলাফল রেফার করছি। A Conceptual Framework on the Study of Trends of Islamic Fashion and Clothing Practices Amongst Young Muslim Female in Bangladesh. 1Mohsina Fatema and 2 Md. Aminul Islam  ২০১৪ সালে করা তাদের গবেষনা ফাইন্ডিংস এ পেয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ নারী হিজাব পরে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে । বিজিএমইএ ফ্যাশন ও টেকনলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আফরোজা আকতার এর করা আরেকটি গবেষনা যেইটা American Scientific Research Journal for Engineering, Technology, and Sciences (ASRJETS) (2017) এ প্রকাশ হয়েছে । গবেষক ২০ থেকে ২৫ এবং ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এই দুই কহোর্টে সার্ভে করেছেন স্ট্রাকচারড প্রশ্নপত্র দিয়ে । উত্তরদাতাদের সবাই নারী এবং তারা হিজাব পরেন । তার গবেষনার ফাইন্ডিংস এ দেখা যাচ্ছে শতকরা ৮১ ভাগ নারী বলছেন তারা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে হিজাব করছেন, ১৬ ভাগ নারী বলেছেন তারা পরিবারের সিদ্ধান্তে হিজাব করছেন এবং মাত্র ৩% নারী সামাজিক কারনে হিজাব পরছেন বলে জানিয়েছেন । তার গবেষনায় আরও উঠে এসেছে যে ৮১ ভাগ নারী বিয়ের আগেই হিজাব পরা শুরু করেছেন । তার র্সার্ভেতে আরো কিছু বিষয় উঠে এসেছে । যেমন ৭৪ ভাগ মেয়েই মনে করছে হিজাব খুব দ্রুতই ফ্যাশন হিসেবে হাজির হবে । শতকরা ১৯ ভাগ মেয়ে হিজাব পরে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে এবং শতকরা ২৬ ভাগ নারীই হিজাব পরছেন মাথার চুলের যত্ন নেয়ার জন্য । কোন রকম কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে এই ২৬ ভাগ নারী হিজাব পরেন না । তার মানে আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি যে হিজাবকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত দাড় করাচ্ছি সকলেই বাধ্য হয়ে হিজাব করছে, স্বামী বা পরিবার বাধ্য করছে অথবা র্ধমীয় বাধ্য বাধকতার কারনেই মেয়েরা হিজাব করছে  এইটা সর্বতভবে সত্যি নয় ।

আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফটো জার্নালিস্ট জিএমবি আকাশ ২০১৫ সালে আরেকটি পিকটোরিয়াল গবেষনা করেছিলেন হিজাবের উপর । ১০০ জন হিজাব পরিহিতা নারীর উপর কোয়ালিটেটিভ ডকুমেন্টেশন । যেখানে উনি পেয়েছেন ৮০ জন নারীই নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরছেন । তারা উচ্চ শিক্ষিত, চাকুরীজীবি কিংবা গৃহিনী । হিজাব পরার পিছনে এই ৮০ জন নারী অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন হিজাব পরলে রাস্তায় স্বাধীনভাবে চলা যায় । আফরোজা আকতারের গবেষনাতেও তিনি ফাইন্ডিংস পেয়েছেন  ৭৪ ভাগ নারীই মনে করছেন হিজাব পরে তারা অনেক বেশি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন । আমি আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশনেও একাধিক নারীকে চিনি যারা শুধু মাত্র পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলতে হয় বলে হিজাব করেন । সকালবেলা আপনি যদি বাংলাদেশের র্গামেন্টস এর মেয়েদের দিকে দেখেন দেখবেন বিরাট একটা অংশের মেয়েরা স্রেফ রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের হয়রানি কমানোর জন্য হিজাব পরেন, কারখানায় ঢোকার ঠিক আগে দরজার ভিতরে ঢুকে হিজাব খুলে ফেলছেন । আমি ব্যক্তিগত জীবনে এমন নারীকেও চিনি উচ্চ শিক্ষিত, বড় পদে কাজ করেন, পশ্চিমা পোশাক পরতে পছন্দ করেন, পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করতে হয় বলে হিজাব পরেন এবং অফিসে যেয়ে হিজাব খুলে ফেলেন । অনেক মডেল আছে ঢাকা শহরে হিজাব পরে চলাফেরা করে । অনেক নারী আছেন ঘরের কাপড় পাল্টাবেন না বলে উপরে হিজাব চাপিয়ে বাইরে বের হয়ে যান । এইগুলা বাস্তব অবজারভেশন কোনটাই মনগড়া কথা না ।

হিজাব বিস্তার এর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়কে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় । মনে করা হচ্ছে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির সাথে সাথে প্রচুর গ্রামীন নারী শহরে ঢুকে পরেছে কাজের প্রয়োজনে । এই গ্রামীন নারীদের বিরাট একটা অংশ পোশাক হিসেবে হিজাবে সাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন । ৭০/৮০ এর দশকে এই পরিমাণ গ্রামীন নারী পোশাক কারখানা বা শহরের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য ভীড় করেনি । ফলে ওই শতকে এই ধরনের গ্রামীন নারীর ভীড় শহুরে মানুষকে দেখতে হয় নি ।  

হিজাব কি কাপড়ের আড়ালে নারীকে পরাধীন করে না স্বাধীন করে?

হিজাব নিয়ে উপেরর আলোচনায় আমরা দেখেছি হিজাব চাপিয়ে দেয়া এবং এইটা সিম্বল অফ অপ্রেশন ঢালাওভাবে আসলে এইটা বলা যাচ্ছে না । এবং হিজাব পরা ব্যক্তি নারী মনে করছেন তিনি তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন যদি তিনি এই পোশাকটি পরেন । তাহলে যারা মনে করছেন এইটা চাপিয়ে দেয়া এবং এই পোশাকটি মেয়েদেরকে ঘেরাটপে বন্দী করছেন তারা কিসের ভিত্তিতে আসলে বলছেন? তারা বলছেন ধর্মমতে এই পাশোকটির উদ্ভব, উৎপত্তি এবং বিস্তার এর তত্ত্বগত যে উৎস সেইটাকে মাথায় রেখে । একটা হচ্ছে বিষয় বস্তুর তত্ত্বগত অবস্থান, আরেকটা হচ্ছে সময়ের সাথে চর্চার মধ্যে দিয়ে তার অনেকগুলো এডাপটিভ ডাইমেনশন যুক্ত হয় সেইটা । হিজাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো একটা দেশে যেখানে পাবলিক পরিবহনে রাস্তায় মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের হেনেস্তার শিকার হতে হয় এবং যে পরিবেশটা আমরা ঠিক করতে পরি নি , বর্তমান অবস্থায় এর কোন সম্ভাব্য সমাধান নাই, তখন কিছু মেয়ে এইটাকে চলাচলের জন্য আপাত সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছে এইটা একটা ডাইমেনশন । এই রকমই সময়ের সাথে প্রয়োজনের তাগিদে অন্য অনেক কিছুর মতোই পোশাকেরও ব্যবহার এর ধরণ পাল্টায়, চরিত্র পাল্টায় । বাংলাদেশে হিজাবও এইরকমই একটি র্বধিত চরিত্রের পোশাক হিসেবে হাজির আছে বলেই মনে হচ্ছে ।  

হিজাব হচ্ছে সিম্বল অফ অপ্রেশন এই বক্তব্য কে অপোজ করে অনেক মুসলিম ফেমিনিস্ট যে যুক্তিটি করেন সেটা হচ্ছে ব্যক্তি নারীর স্বাধীনতা তার শরীরের মধ্যে কিনা ? তাহলে এই চিন্তার সাথে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীদেহকে অবজেকটিফাই করার যে চিন্তা তার সাথে পার্থক্য কি ?  নারীর শরীর ঢেকে রাখা কিংবা শরীর অবমুক্ত করার মধ্যে দিয়ে কি নারীর অর্জিত স্বাধীনতা পরিমাপ করা যাবে কিনা ? নারী স্বাধীনতা নারীর কম কাপড় পরিধান বা বেশি কাপড় পরিধানের মধ্যে নিহিত আছে কিনা ? চিন্তা, চেতনায়, শিক্ষায়, সামাজিক অর্জনে, কর্মক্ষেত্রে যদি হিজাব পরা একটি নারী এগিয়ে যায় তাহলে তাকে আমরা স্বাধীন নারী বলব কিনা ? ভারতের শাহীনবাগ কিংবা কাশ্মীর কিংবা প্যালেস্টাইনে আমরা দেখেছি হিজাব পরিহিতা নারীরা পুরষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা জাতির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে । এই হিজাব পরিহিতা নারীরা কি স্বাধীনতার সিম্বল না অপ্রেশনের সিম্বল ? শহীনবাগে হিজাব পরিহিতা যে নারীরা শ্লোগান দিয়ে দুনিয়া কাঁপালো “লড়কে ল্যাংগে আজাদী ” তারা কিসের সিম্বল পরাধীন নারী না স্বাধীন নারী ?

ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত