
“শাহিনা আর শাহাজাহান নামে দুই জনকে সুরঙ্গ কেটে বের করার চেষ্ঠা করা হচ্ছে সকাল থেকে। চারপাশে গলিত লাশ মাছি, অন্ধকার, যেকোনো মুহুর্তে সবকিছু ধ্বসে পরার ভয়, এরই মধ্যে একটু একটু করে কনক্রিট কেটে কেটে হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছেন তারা।শেষ কটি প্রাণ বাচাঁতে ফায়ার ব্রিগেড আর সাধারণ মানুষ মিলে যে অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছে, সেই কাহিনী কোথাও লেখা থাকবে কিনা জানিনা, শুধু এইটুকু জানি, যে দেশে মানবজীবনের কানাকড়ি দাম নেই বলে এসেছি এতদিন, সে দেশেই একটি একটি করে জীবন বাঁচানোর এমন অতুলনীয় পাগলামি ….হে আমার দেশের মানুষ, তোমাদের আমরা মাথায় করে রাখব নাকি বুকে জড়িয়ে রাখব” – মাহা মির্জা, ২৮ এপ্রিল ২০১৩
“রাত এগারোটা আমার ননদ কাঁদছে কারন শাহীনা বোধয় বেঁচে নেই, তখনই সেই জার্মান থেকে আমার বান্ধবী মাহার ফোন পাই, ফোনে মেয়েটা চিৎকার করে কাঁদছিল শহীনার জন্য…. কি বুকফাটা কান্না !!!!!!!!! উদ্ধার কর্মীদের কি ব্যকুল কান্না শহীনার জন্য, আমরা কতজন যে শুধু নিরব চোখের জল ফেলেছি মেয়েটার জন্য। শহীনার আমার ছেলের বয়সী একটা ছেলে আছে, কি অদম্য প্রান শক্তি মাতৃত্বের!!!!!! ……. জিডিপি 6.3 আমার দরকার নাই, এই পৈশাচিক মানুষ খুনের উন্নয়ন আমার দরকার নাই, এই নারকিয় মৃত্যু যন্ত্রনার উন্নতি আমার দরকার নাই . . . . শুধু আর কোন শহীনার সন্তান যেন মাতৃহারা না হয়, আর কোন সন্তান যেন মাতৃহারা না হয় …………” দিলশানা পারুল ২৯ এপ্রিল ২০১৩

“কষ্টের সংবাদ:অবশেষে তিনিও শাহানার পথে হাটলেন…সাভার দুর্ঘটনায় শাহানা কে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত উদ্ধারকর্মী ইজাজুদ্দিন কায়কোবাদ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসারতঅবস্থায় স্থানীয় সময় রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)।উল্লেখ্য, তিনি শাহানাকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। পরবর্তীতেউন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।আমরা এই মহান যোদ্ধার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।আল্লাহ্ তাঁকে বেহেশত নসিব করুন…আমিন।” – ৫ ই মে ২০১৩ Source: SportsCenter-BD
“যারা উদ্ধারকাজে এখন পর্যন্ত প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা হলেন এলাকার ‘সাধারণ’ মানুষ – রাজমিস্ত্রী, যোগালী, মেকানিক, ড্রাইভার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, কারখানা মজুর, দোকানদার, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী। নিজের হাত পা, হাতুড়ি, শাবল, খুন্তি আর কাচি দিয়ে তাঁরা অসাধ্য সাধন করেছেন। বাংলাদেশে যেকোনো দুর্যোগে প্রয়োজনে মানুষের এই স্বতস্ফূর্ত সাড়া অমূল্য। যদি ফায়ার ব্রিগেডের যথাযথ যন্ত্রপাতি আর জনবল থাকতো, যদি সেনাবাহিনীর বিদ্যমান ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও জনবল যথাযথভাবে ব্যবহার করা হতো তবে হতাহত আরও কম হতো। এখনও অনেক মানুষ আটকে আছে, এখনও অনেক প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ আছে।” আনু মুহম্মদ – ২৫ এপ্রিল ২০১৩

“ রহিমার শরীরের নীচের দিকের অংশ ধ্বসে পড়া ভবনের একটা কলাপসিবল গেইটের মাঝে আটকে পড়ে ছিলো। তার পেছনে আটকে ছিলো আরো পাচজন। কলাপসিবল গেইট টা কাটা গেলে রহিমাকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি বাকি পাচজনকেও উদ্ধারের একটা সম্ভাবনা ছিল। গতকাল দুপুর থেকে স্থানীয় মানুষজন চেষ্টা করেছে হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকে হেক্সো ব্লেইড স হ বিভিন্ন ভাবে গেইটা টা কেটে রহিমাকে উদ্ধারের। যারাই চেষ্টা করেছে সবাই বলছে একটা কাটিং মেশিন দরকার যেটা দিয়ে ঐ অবস্থায় কলাপসিবল গেইটটা কেটে রহিমাকে বের করা যাবে। এই কাজটা করার জন্য কোন মেশিন পাওয়া যায় নাই। রহিমাকে চিকিৎসাদেয়ার জন্য ডাক্তার পাওয়া যায় নাই। রাত্রে আটটার দিকে যখন একজন ডাক্তার পাওয়া গেল, ততক্ষণে রহিমা মরে গেছে। শরীরের নীচের দিকটা কেটে বের করতে পারলে ভেতরের কয়েকজনকে বের করা যেত। ডাক্তারকে বলা হলো। ডাক্তার লাশ কাটতে রাজী না। লোকজন নিজেরাই চাপাতি যোগার করে পা কেটে বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু পারা গেল না। নয়টার দিকে আর্মি এসে ধ্বসে পড়া ভবনের পেছন এর এই দিকটা থেকে সব মানুষকে সরিয়ে দিল। তার আগ পর্য ন্ত মানুষ এভাবে নিজ উদ্যোগে অনেক জীবিত ও মৃত মানুষকে উদ্ধার করেছে। রাত ৩টার দিকেও ঐ স্থানে কোন উদ্ধার তৎপরতা চোখে পড়ে নি। ফায়ার সার্ভিস বা আর্মি একপাশ থেকে (মূলত সামনের দিক) উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিল। অনেক দেরীতে পাশের আরো দুই একটা দিকে তাদেরকে কাজ করতে দেখা গেছে। সেই উদ্ধার তৎপরতার বৈশিষ্ট হলো এরকম: সাধারণ মানুষ বা শ্রমিকরা হয়তো নিজ উদ্যোগে খুজে খুজে কোন একটা জায়গায় কোন জীবন্ত মানুষ বা লাশের সন্ধান পেল, তারপর আর্মি বা ফায়ার সার্ভিসের লজিষ্টিকস বা যন্ত্রপাতির সাহায্য চাইল। সেই যন্ত্রপাতিও বেশির ভাগ সময় পাওয়া যায় না। একটা করাত একটা ড্রিল মেশিনের জন্য মানুষকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছি। এমনও হয়েছে, আটকে পরা মানুষ নিজেই একটা জগ লিভার, ড্রিল মেশিন চাচ্ছে যা দিয়ে নিজেরাই নিজেদেরকে বের করার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু সেই যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় নাই।

ঐ খানে গেলেই আপনি শুনতে পাবেন নিখোজ মানুষের আত্মীয় স্বজন সহ স্থানীয় মানুষরা বলছেন, প্রশাসন তেমন কোন কাজ করছে না, যা করার স্থানীয় মানুষরাই করছে, একটু খেয়াল করলেই আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন, এমনকি জনগণের সেই স্বতস্ফুর্ত তৎপরতার জন্যও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, লজিষ্টিকস ও উদ্ধার তৎপরতায় আগ্রহী মানুষরা পাচ্ছেন না। সব চেয়ে বড় কথা, যেহেতু ধ্বসে পড়া ভবনের সমস্ত অংশেই অসংখ্য মানুষ আটকে পড়ে আছেন, তাই সমস্ত দিক থেকেই জীবিত মানুষকে উদ্ধার করার সমন্বিত একটা তৎপরতা চালানো জরুরী। ইতিমধ্যেই অনেক দেরী হয়ে গেলও, এখনও সময় আছে, বুয়েট সহ দেশের এবং দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গিয়ে কোন স্থানে কিভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়, কোন দিকে ভারী যন্ত্রপাতি আর কোন দিকে হালকা যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করলে জীবিত মানুষগুলোকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব তার একটা পরিকল্পনা করার এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সহ আরো বেশি সংখ্যক সেনা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিয়োগ করার।প্রতিটি সেকেন্ড এখন মূল্যবান, যা করারই এখনই করতে হবে।” – কল্লোল মোস্তফা, ২৫ এপ্রিল ২০১৩
( লিখা এবং সকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ২০১৩ টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
Be the first to write a comment.